ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় পাহাড় খেকোদের দৌরাত্ম্য থামাবে কে?

পেকুয়া প্রতিনিধি ::  পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের আলেকদিয়া পাড়ার মৃত মুসা আলীর ছেলে দলিলুর রহমান। তার এক ছেলে আজমগীর পুলিশের চাকরি করেন। ছেলে পুলিশে চাকরি করেন সেই সুবাধে এলাকাবাসীকে ভয় দেখিয়ে দিব্বি পাহাড় কেটে চলছেন।

তার নেতৃত্বে শিলখালী ছৈয়দ নগর এলাকার আবুল শামার ছেলে মুহাম্মদ রাশেদ, মাঝের ঘোনা এলাকার মৃত বেলাল উদ্দিনের ছেলে আবু তৈয়ব, মৃত আবদু ছালামের ছেলে মোঃ সোহেল ও মৃত করিমদাদের ছেলে জকরিয়াসহ আরো কয়েকজন ব্যক্তি রীতিমতো পাহাড় কাটার মহোৎসব চালালেও তা বন্ধে কোন উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।

এছাড়াও টইটংয়ে দা-বাহিনীর নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ও বারবাকিয়া বনের রাজা জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট প্রতিদিন পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন।

প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় প্রশাসনের চোখের সামনেই বিরামহীন কাটা হচ্ছে এসব পাহাড়। উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও থানা প্রশাসনকে বারবার পাহাড় নিধন বিষয়ে অবগত করা হলেও অভিযানের কোন ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ না করায় আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেল পাহাড় কাটার ভয়াবহ চিত্র। শিলখালীর মাঝের ঘোনা এলাকায় বেশ কয়েকটি পয়েন্টে পাহাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। প্রায় ডজনখানেক ট্রাক সে মাটি নিয়ে যাচ্ছে বাইরে। এমনকি ওই পাহাড়ে রক্ষিত বনায়নের বেশ কয়েকটি বড় বড় গাছ পাহাড় কাটার কারণে ভেঙে পড়েছে। বেশ কয়েকটি বসতবাড়িও রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।

তাৎক্ষনিকভাবে পাহাড় কাটার বিষয়টি পেকুয়ার ইউএনও সাঈকা সাহাদাতের নজরে দিলে তিঁনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিকি মারমার সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। মিকি মারমার সাথে যোগাযোগ করলে ওনি বলেন, পেকুয়া থানার ওসি কামরুল আজমকে অভিযানের জন্য পুলিশ ফোর্স দিতে বললে তিনি সব পুলিশ ডিউটিতে আছেন বলে জানান। এমনকি লিখিতভাবেও পুলিশ চাওয়া হয়েছে বলেও জানান মিকি মারমা। ওসি কামরুল আজমের সাথে যোগাযোগ করলে তিঁনি বলেন, পুলিশ ব্যস্ত আছে। পরে বিষয়টি দেখবে। সর্বশেষ বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,পাহাড় কাটার বিষয়টি নিয়ে তাঁর লোক ইউএনও কার্যালয়ে গেছেন। তার এক ঘন্টা পর বন বিভাগের দুইজন লোক এসে বললেন তারা উপজেলা প্রশাসনের অবগত করে অভিযানের সহায়তা চাইলেও কাউকে পায়নি।

এদিকে পাহাড় কাটার ভিডিও চিত্র ও প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে টনক নড়ে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের।

শনিবার (৮আগস্ট) পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিকি মারমা ও রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লার নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করেন। একই সাথে এ ঘটনায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করার উদ্যোগ শুরু করেন।

স্থানীয় সচেতন মহল জানান, আ’লীগ ও বিএনপির নাম ধারণ করে কয়েকজন পাহাড়খেকো এবং ছেলে পুলিশের চাকরি করে এ অজুহাতে দলিলুর রহমান নামে এক ব্যক্তি একত্রিত হয়ে দিবালোকে পাহাড় কেটে চললেও প্রশাসনের ভূমিকা নিরব। এ কারণে ওই ইউনিয়নসহ উপজেলার আরো দুই পাহাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ক্রমেই পাহাড় সাবাড় হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ব্যাপকহারে পাহাড় কাটার ফলে উপজেলা বনাঞ্চল হুমকির মুখে রয়েছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, বারবাকিয়া ও টইটং ইউনিয়নে বনাঞ্চল সংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, লাইসেন্স ও বৈধ কাগজপত্র বিহীন এসব ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে পাহাড়ি মাটি ও বনাঞ্চলের কাঠ। এসকল অবৈধ কার্যক্রমে ব্যবহৃত সকল ট্রাকের মালিকদের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার কথাও জানায় স্থানীয়রা।

এবিষয়ে পাহাড় কাটার প্রধান অভিযুক্ত আবুল শামার ছেলে রাশেদ দম্ভোক্তি করে বলেন, তাদের সাথে পুলিশে চাকরি করে এমন এক ব্যক্তির পিতা রয়েছে। তাদের কিছুই হবেনা। পুলিশ ছেলের পিতা দলিলুর রহমানের মেঠোফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বারবাকিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গফুর মোল্লা বলেন, শনিবার উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারসহ বনবিভাগের লোকজন পাহাড় কাটার স্থান পরিদর্শন করা হয়েছে। পাহাড় নিধনে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হবে।

উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিকি মারমা বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও বনবিভাগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাহাড় কাটার দায়ে যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা শাহাদাত বলেন, পাহাড় কাটার সাথে জড়িতরা যতই ক্ষমতাবান হোক না কেন, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পাঠকের মতামত: